ভারতের ‘অ’ভ’দ্র’তায়’ পাকিস্তানের প্রতিবাদ, ক্রিকেট লড়াইয়ে ফের যু’দ্ধে’র ঝাঁজ



দীর্ঘদিন ধরেই কোনো দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলে না ভারত ও পাকিস্তান। এখন মুখোমুখি হওয়ার সুযোগ পায় শুধু এশিয়া কাপ আর আইসিসি ইভেন্টেই। দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর মাঠের লড়াই দেখতে তাই ভক্ত-সমর্থকেরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকেন। কিন্তু সেই লড়াইটা যে এখন কেবল কাগজে কলমেই। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে একতরফা ম্যাচ জেতে তরফা।


রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে এশিয়া কাপের গ্রুপ পর্বের ম্যাচে একপেশে লড়াইয়ে পাকিস্তানকে ৭ উইকেটে হারিয়েছে ভারত। টসে জিতে আগে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ১২৭ রান তোলে পাকিস্তান। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ১৬.৫ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়েই সেই লক্ষ্য পেরিয়ে যায় ভারত।

তবে দুই চিরপ্রতিন্দ্বীর হাইভোল্টেজ ম্যাচের ফল ছাপিয়ে গেছে দুই দলের ক্রিকেটারদের আচরণে। টসের পর ভারতীয় অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব সৌজন্যতার হাত না বাড়িয়ে সরে আসেন একটু দূরে। ম্যাচ শেষে পাকিস্তানি খেলোয়াড়েরা করমর্দনের জন্য এগিয়ে এলেও ভারতীয় ক্রিকেটাররা অস্বীকৃতি জানান। যা নিয়ে ক্রিকেট লড়াইয়ে যুদ্ধের ঝাঁজ ঝাঁজ অবস্থা। 

ক্রিকেটে যেকোনো ম্যাচ শেষেই দুই দলের খেলোয়াড় ও সাপোর্ট স্টাফরা করমর্দনকে স্বাভাবিক বা স্পিরিট অব ক্রিকেট হিসেবে ধরা হয়। ফলে খেলা শেষে হাত না মেলানো মূলত ‘অভদ্রতা,’ যা প্রতিপক্ষকে ছোট করতে করা হয়। ভদ্রলোকের খেলা ক্রিকেটে এমন দৃশ্য দেখা যায় না বললেই চলে।  তাই ভারতের এমন কর্মকাণ্ড ভালোভাবে নেয়নি পাকিস্তান শিবিরও। 


এই আচরণের ব্যাখ্যায় ভারত অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব জানান, কাশ্মীরের পেহেলগামে সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলায় নিহত সেনাদের শ্রদ্ধা জানাতেই তারা এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি বলেন, 'পেহেলগামের শহীদদের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা ও সংহতি জানাতেই ম্যাচ শেষে করমর্দন থেকে বিরত ছিলাম। এই জয় তাঁদের পরিবার ও সেনাবাহিনীকে উৎসর্গ করছি।'


ভারতীয়দের এই প্রতিবাদের পাল্টা দিতে এদিন পুরস্কার মঞ্চে আসেনি পাকিস্তান অধিনায়ক সালমান আগাও।  পাকিস্তানি গণমাধ্যম জানিয়েছে, অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকা ভারতীয় ধারাভাষ্যকারের সঙ্গে কথাও বলেননি সালমান। তিনি নাকি জানিয়েছেন, উপস্থাপক পাকিস্তানি হলে তিনি অংশ নিতেন।  এমনকি ভারতীয় দলের আচরণ নিয়ে ম্যাচ রেফারির কাছেও আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জানিয়েছে পাকিস্তান টিম ম্যানেজমেন্ট।


পাকিস্তান দলের কোচ মাইক হেসন ভারতীয় দলের এই আচরণকে অ-খেলোয়াড়সুলভ বলে উল্লেখ করেছেন।  সংবাদ সম্মেলনে নিউজিল্যান্ডের এই কোচ বলেছেন, ‘ম্যাচ শেষে হাত মেলানোর জন্য আমরা সবাই প্রস্তুত ছিলাম। কিন্তু প্রতিপক্ষ সেটা করেনি বলে হতাশ হয়েছি। হাত মেলানোর জন্য আমরা তাদের দিকে এগিয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু ওরা ড্রেসিংরুমে চলে যাচ্ছিল।’


পাকিস্তানের দাবি অনুযায়ী, ভারতের এমন আচরণ ক্রীড়া নীতিমালার বাইরে এবং খেলোয়াড়দের পারস্পরিক সম্মানবোধের পরিপন্থী। এদিকে ভারতের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় নিহতদের পরিবারের প্রতি সংহতি জানাতেই তারা পাকিস্তান দলের সঙ্গে ম্যাচ-পরবর্তী করমর্দন ও অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা থেকে বিরত ছিল।


পেহেলগামে সেই হামলায় ২৬ জন নিহত হন, যাদের মধ্যে ২৫ জন ভারতীয় নাগরিক। ভারত সরকার এই হামলার পেছনে পাকিস্তানভিত্তিক গোষ্ঠীর সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে দাবি করেছে। ঘটনার পর দু’দেশের মধ্যে সামরিক উত্তেজনা দেখা দেয় এবং মে মাসে দুই পক্ষ সীমিত সংঘর্ষে জড়ায়। পরে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় ভারত ও পাকিস্তান। তবে কূটনৈতিক সম্পর্কের অবনতি এখনও চলমান।

No comments

Powered by Blogger.